Friday, October 11, 2019

মনের মাপকাঠি

বউয়ের কলেজের সামনে বাইকের মধ্যে বসে আছি। তাকে নিয়ে যেতেই এসেছি। বউ এবার অনার্স
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আমি নিজে বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। এইচএসসি পাশ করার পরই জীবিকার তাগিদে ইউরোপ চলে যাই। পাঁচ বছর পর দেশে এসেছি।
দেশে আসার পর ফ্যামিলি থেকে আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলো। তারপর বিয়ে করে বাড়িতে বউ নিয়ে আসলাম। আজ বিয়ের এক সপ্তাহ পরে বউকে তার কলেজে নিয়ে গেলাম। কিছুদিন পরে তার ভিসা হয়ে গেলে সেও আমার সাথে ইউরোপ চলে যাবে। তাকে কলেজে দিয়ে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম। ২/৩ ঘন্টা পর সে ফোন দিয়ে বললো, -"তুমি কোথায়? আমার ক্লাস শেষ"
-তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, আমি চলে আসছি।
.
সেখান থেকে চলে এলাম তার কলেজ গেটের সামনে। একটা মেয়ে এসে বললো, "এইযে দুলাভাই! কেমন আছেন?"
-আপনাকে চিনলাম না তো?
-আমি তাশফিয়ার ফ্রেন্ড, সে ই আপনার ছবি দেখিয়েছে।
আপনাদের এতোক্ষণ বলাই হয়নি, আমার বউয়ের নাম হলো 'তাশফিয়া'।
-খুব গল্প হচ্ছে তাই না? পিছন থেকে এসে হঠাৎ তাশফিয়া এসে কথাটি বললো।
এই সর তো, বলে সে তার বান্ধবীকে সরিয়ে দিয়ে আমার বাইকে উঠে বসলো। আমি বাইক স্টার্ট দিলাম।
একটি হোটেলে নেমে দুজন দুপুরের খাবার সারলাম। বাড়িতে আছে মা-বাবা ও বোন। তাদের প্রত্যেকের জন্য এক প্যাকেট করে বিরিয়ানি পার্সেল নিলাম।
লাঞ্চ করার পর কিছু সময় ঘুমানো এটা আমাদের বাসার সবার নিয়মিত অভ্যাস। আমরাও বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শোয়ে পড়লাম।
.
সন্ধ্যার পর সবাই মিলে বাসার মধ্যে বসে গল্প করছি। মা বললেন, "বাবা, বৌমাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আয়, তোর তো আর হাতে বেশিদিন নেই"।
সেদিন রাতে ঘরে বসে তাশফিয়ার সাথে আলোচনা করলাম কোথায় যাওয়া যায়! আমি বললাম, "কক্সবাজার অথবা বান্দরবন ", সে বললো, "এতোদূর এখন বেড়াতে যাওয়ার দরকার নেই, তার চেয়ে বরং সিলেটের সব পর্যটন স্পটে ঘুরে আসি"। আমিও তার কথায় সায় দিলাম।
তারপর আমার নিজ জেলা তথা সিলেটের সব জায়গায় আস্তে আস্তে বেড়াতে গেলাম।আমি ফ্যামিলির সবাইকে নিয়ে যেতে চাইছিলাম, কিন্তু মা বললেন, "এবার তুই আর বউমা যা, পরের বার আসলে নাহয় আমাদের নিয়ে যাইস"।
দুই সপ্তাহর মধ্যে সিলেটের জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল, মাধবকুণ্ড ইত্যাদি স্থানে বেড়ানো শেষ হলো।
.
তাশফিয়া দ্রুত আমাদের সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে। কয়েক সপ্তাহ হলো সে আমার সাথে থাকে, দেখলে মনে হয় যুগযুগ ধরে দুজন একসাথে আছি।
একসময় আমার যাওয়ার সময় এসে গেলো। তখন যেনো তার ভালোবাসা উপচে পড়ছিলো আমার জন্য। ইয়ারপোর্টে বিদায় নেয়ার সময় লক্ষ্য করলাম তার চোখের মধ্যে পানি। কাউকে সেটা সে বুঝতে না দিলেও আমার চোখ এড়াতে পারেনি। তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, "কাঁদেনা পাগলি , আমিতো একেবারেই চলে যাচ্ছি না"।
মা ও বোন আমাকে ধরে খুব কান্না করলো। মা বললেন, 'নিয়মিত যোগাযোগ করিস, নিজের খেয়াল রাখিস '।
বিদেশে গিয়ে আবার নিজের কর্মজীবনে প্রবেশ করলাম। তার মধ্যে তাশফিয়ার সাথে প্রতিদিন ই ফোনে টুকটাক কথা হতো।
সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতের বেলা বালিশে মাথা রাখার পর তার কথা খুবই মনে পড়তো। প্রতিদিন আমার বুকে মাথা রেখে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। আমিও তাকে পরম মমতায় আগলে রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম।
তার কথা ভাবছি এমন সময় হোয়াটসাপে তার একটা মেসেজ এলো। তাতে লিখা ছিলো,(I miss you so much allways, I feel alone every night. I remember that moments was with you)
.
চিন্তা করলাম, বিধাতার কী সৃষ্টি! দুটি মনে একই ফিলিংস!!
.#অনূভুতি

#shawon_bond

Labels: