Tuesday, April 14, 2020

ফেনীতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন ‘বেস্ট ইনে’

হোটেল বেস্ট ইন
ফেনীতে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসোলেসন ইউনিটে দায়িত্ব পালন শেষে চিকৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা থাকবেন জেলার অভিজাত আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ‘হোটেল বেস্ট ইন’ এ।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) রাতে স্টার লাইন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও হোটেলের চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জাফর উদ্দিন বলেন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর পরামর্শে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্টদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এখানে কোয়ারেন্টিন শেষ করে পরিবার ও কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। 

ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
তিনি বলেন, দায়িত্বরত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এটি একটি ভালো ব্যবস্থা। হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে দায়িত্বরতদের পরিবারে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এ সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাজ্জাদ হোসেন ফেনী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, স্টার লাইন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং হোটেলের চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সুত্রঃ বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম

Monday, April 13, 2020

শুভ নববর্ষ ১৪২৭ স্বাগতম

একটি বছর অতিক্রান্ত করে বাঙালিরা এগোতে চলেছে এক নতুন বছরের সূচনার পথে। ১৪২৬ সনকে বিদায় জানিয়ে বাঙালি বরণ করে নেবে ১৪২৭ সনকে।

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ বা নববর্ষ পালিত হয়। সেইমতোই এবছর নববর্ষ পালিত হতে চলেছে আগামীকাল অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল। দুঃখ-কষ্ট, মনের সমস্ত গ্লানি ভুলে এগিয়ে যাবার সময় এসেছে। তবে এই বছরটা একটু অন্যরকম।

করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জনজীবন। তাই কিছুটা হলেও মন খারাপ বাঙালিসহ গোটা বিশ্ববাসীর।
কচি পাঁঠার ঝোল, চিংড়ি বা ইলিশ, আপামর বাঙালির পাতেও পড়েছে ভাটা। সবমিলিয়ে নববর্ষের সেই আনন্দ এখন অধরা।


Saturday, April 11, 2020

নকশী কাঁথার মাঠ -জসীম উদ্দীন

নকশী কাঁথার মাঠ ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের একটি অনবদ্য আখ্যানকাব্য। বাংলা ভাষায় রচিত এই আখ্যানকাব্যের লেখক বাংলাদেশের পল্লীকবি জসীম উদ্ দীননকশী কাঁথার মাঠ -জসীম উদ্দীন
বাংলা কবিতার জগতে যখন ইউরোপীয় ধাঁচের আধুনিকতার আন্দোলন চলছিল তখন প্রকাশিত এই কাব্যকাহিনী ঐতিহ্যগত ধারার শক্তিমত্তাকে পুনঃপ্রতিপন্ন করে।
এটি জসীমউদদীনের একটি অমর সৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত। কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদিত হয়ে বিশ্বপাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল।

নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যোপন্যাসটি রূপাই ও সাজু নামক দুই গ্রামীণ যুবক-যুবতীর অবিনশ্বর প্রেমের করুণ কাহিনী। এই দুজনই ছিলেন বাস্তব চরিত্র।
নকশী কাঁথার মাঠ-এর নায়ক রূপাই গাঁয়ের ছেলে, কৃষ্ণকায়, কাঁধ পর্যন্ত চুল। তার কতগুলো গুণ আছে : সে ভালো ঘর ছাইতে জানে, যে হাত দিয়ে সে সুন্দর ঘর ছায়, সেই হাতেই লড়কি চালাতে জানে, সড়কি চালাতে জানে, আবার বাঁশের বাঁশিতে তার মতো আড় আর কেউ দিতে পারে না, এমনকি তার মতো আর কেউ গান গাইতেও পারে না।
এই রূপাইয়ের সঙ্গে পাশের গ্রামের মেয়ে সাজুর ভালোবাসা হয়, আর তারপর হয় বিয়ে। তারা সুখের সংসার পাতে। একদিন গভীর রাতে চাঁদ ওঠে, গোবর নিকানো আঙিনায় মাদুর পেতে সাজু রূপাইয়ের কোলে শুয়ে রয়, তাই একসময় বাঁশির বাজনা থেমে যায়।
কারণ যাকে শোনানোর জন্য রূপাই এতদিন বাঁশি বাজিয়েছে, সেই মানুষটি এখন তারই ঘরে। সেদিন রাতের পূর্ণিমার আলোতে সাজুর রূপ দেখে দারুণ মুগ্ধ হয় রূপাই, কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে কী যেন এক সংশয় জেগে ওঠে।
সে ভাবে, এত সুখ আমার সইবে তো! এক অজানা আশঙ্কায় তার অন্তরের বেদনাশ্রু সাজুর কোমল মুখের ওপর পড়ে, সাজুর ঘুম ভেঙে যায়, স্বামীর চোখে জলের ধারা দেখে সাজু বলে, তুমি কাঁদছ কেন? তোমাকে তো আমি কোনো আঘাত দিইনি।
রূপাই বলে, এক অজানা আশঙ্কায় কাঁদছি। সাজু বলে, না না, আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি। এমন সময় হঠাৎ খবর আসে, বনগেঁয়োরা তাদের গাজনা-চরের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রূপাই ছুটে যায় লড়কি-সড়কি হাতে বনগেঁয়োদের প্রতিরোধ করতে। সেখানে লড়াই হয় (স্থানীয় ভাষায় কাইজ্জা), কয়েকটি খুন হয় এবং ফলশ্রুতিতে রূপাই ফেরারি হয়ে যায়।
আর সাজু রোজ একটা পিদিম বা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকে রূপাইয়ের পথ চেয়ে। একটা মরা পাতা ঝরে পড়লেও রূপাই-বিরহিণী সাজু, পাতার শব্দ লক্ষ করে আলোটা নিয়ে ছুটে যায়, কোথায় রূপাই? দিন চলে যায়। একদিন গভীর রাতে রূপাই এসে দাঁড়ায় সাজুর সামনে।
সাজু দেখে, রূপাইয়ের সারা গায়ে মাটি মাখা, রক্তের দাগও লেগে আছে কোথাও কোথাও। সাজু তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোমাকে আর যেতে দেবো না।’ রূপাই বলেছে, ‘আমার না যেয়ে উপায় নেই, যেতেই হবে। কেননা, আমি যদি ধরা পড়ি, আমার ফাঁসি অথবা কালাপানি হবে।’ সাজু এখানে বলেছিল, ‘তুমি তো চলে যাবে আমাকে কার কাছে তুমি রেখে যাবে’, তখন রূপাই বলে,
“সখী দীন দুঃখীর যারে ছাড়া কেহ নাই
সেই আল্লার হাতে আজি আমি তোমারে সঁপিয়া যাই।
মাকড়ের আঁশে হস্তী যে বাঁধে, পাথর ভাসায় জলে
তোমারে আজিকে সঁপিয়া গেলাম তাঁহার চরণতলে।”